উখিয়ায় ইয়াবা পাচার থেমে নেই : গডফাদাররা প্রকাশ্যে

শফিক আজাদ, উখিয়া •

সীমান্তের উপজেলা টেকনাফের পর ইয়াবার বিশাল হাঁট উখিয়ায়। সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন বানের পানির মত ইয়াবার চালান ঢুকছে উখিয়ায়। এসব বিশাল চালান সড়ক ও সাগর পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। ২০টি গ্রামে ইয়াবা পাচারের হাঁট বসলেও প্রশাসন রয়েছে অন্ধকারে। আর এসব ইয়াবার হাঁট পরিচালনা করার জন্য ১৫টিরও অধিক সিন্ডিকেট রয়েছে। টেকনাফে একের পর এক ইয়াবা কারবারী কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর উখিয়ায় সুকৌশলে এ ব্যবসার আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে আসে। কতিপয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে রাষ্ট্রিয়ভাবে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা করা ইয়াবা ব্যবসা দিন দিন চালিয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে ও খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ২৪অক্টোবর র‌্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে উখিয়ার বালুখালী হতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ শফিক নামের ১ জনকে আটক করেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নিয়ে আসছে ইয়াবা। বিশেষ করে এসব পাচারে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে স্থানীয় পাচারকারীরা।

এক সময় উখিয়া-টেকনাফের মধ্যে ইয়াবা পাচারের শীর্ষ টার্নিং পয়েন্ট ছিল টেকনাফ। ঘটনা প্রবাহে ও কালের আবর্তে এখন ইয়াবার বাজার দখলে আসে উখিয়ায়। স্থানীয়রা জানান, গত মার্চ মাসে ১০২ জন শীর্ষ ইয়াবা কারবারী টেকনাফে আত্মসমর্পন করে। এছাড়াও বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সাথে পৃথক বন্দুক যুদ্ধে অর্ধশতাধিক ইয়াবা কারবারী নিহত হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার চালান উদ্ধার করতে গিয়ে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে চলছে। এতে রোহিঙ্গাও রয়েছে।

অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টেকনাফে বন্দুক যুদ্ধে ইয়াবা কারবারীদের নিহতের মিছিল লম্বা হওয়ায় ইয়াবা সিন্ডিকেট সদস্যরা কৌশল পাল্টিয়ে এখন উখিয়ায় চলে আসে। তাদের ইশারায় মিয়ানমার থেকে বিশাল বিশাল ইয়াবার চালান সাগর ও নদী পথ বেয়ে উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পড়ছে। উখিয়ার শীর্ষ কয়েকজন চিহ্নিত গডফাদার যাদের নামে রয়েছে নামে বেনামে কয়েকটি নোহা গাড়ি,দোকান,দু,তলা বাড়ি,নগদ টাকাসহ কোটি কোটি টাকা। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েক জন জানান, চিহ্নিত ইয়াবার গডফাদারদের যদি আইনের আওতায় আনা হয় তাহলে অল্প দিনে কোটিপতি হওয়ার অজানা কাহিনী বেরিয়ে আসবে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, পালংখালী, আঞ্জুমান পাড়া, ফারিরবিল, থাইংখালী, রহমতের বিল, তেলখোলা, ধামনখালী, বালুখালী, ঝুমেরছড়া, টিভি টাওয়ার, কুতুপালং,ঘিলাতলী, হাজিরপাড়া, মৌলভী পাড়া, সিকদার বিল, ডেইলপাড়া, ফলিয়াপাড়া, টাইপালং, দরগাহবির, হাতিমোড়া, হিজলিয়া, জাদিমোড়া, হরিণমারা, তুতুরবিল, কোটবাজার, রতœাপালং, রুহুল্লারডেবা, গয়ালমারা, চাকবৈঠা, ভালুকিয়া,তুলাতলী, রুমখাঁ কোলালপাড়া, ক্লাশপাড়া, পাতাবাড়ি, মরিচ্যা, নলবনিয়া, গুরামিয়ার গ্যারেজ, পাগলিরবিল, জালিয়াপালং, পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, নিদানিয়া, ইনানী, মনখালী, চোয়াংখালী, মাদারবনিয়াসহ অর্ধ শতাধিক গ্রামে ইয়াবার হাঁট বসে। আর এসব অবৈধ হাঁটে ইয়াবা বিকিকিনি করার জন্য ৩ শতাধিক খুচরা ও পাইকারী মাদক সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের রয়েছে মিয়ানমারসহ সারা দেশে নেটওয়ার্ক।

সচেতন নাগরিক সমাজের অভিমত, উখিয়ার ৫০টি স্পটে প্রকাশ্যে ইয়াবার লেনদেন ও পাচারের ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা জানে না। এমনকি ৫০ জনের অধিক গডফাদার থাকলেও তাদেরকে প্রশাসন শনাক্ত করতে পারছে না।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্শ^বর্তী টেকনাফে প্রতিদিন ইয়াবা কারবারীকে গ্রেফতার ও অভিযানকারে বন্দুকযুদ্ধে চিহ্নিত মাদক পাচারকারীরা নিহত হলেও উখিয়ার চিত্র তার উল্টো। এখানে অভিযান তো দূরের কথা ইয়াবা গডফাদারকে আরও সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়া হয়। মোটা অংকের লেনদেনের কারনে উখিয়ার ইয়াবা কারবারীরা নিরাপদে অবৈধ ব্যবসার হাঁট বসিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, উখিয়া থানার অফিসার ইনজার্চ মো: আবুল মনসুর বলেন, ইয়াবা কারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাতে ছোট-বড় ইয়াবার চালানসহ পাচারকারী ধরা পড়ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ও মাদক পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হবে।